কালের কন্ঠঃ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে সচিব নিয়োগ হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক সচিব সামসুল আলম।
সম্প্রতি নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে টাকার বিনিময়ে সচিব নিয়োগের আটটি ঘটনা তুলে ধরেছেন তিনি। সাবেক এ সচিবের পোস্টটি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
সাবেক সচিব সামসুল আলম তার পোস্টে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে নগদ টাকায় সচিব হয়, এটা কোনো বাজে কথা নয়।
ঘটনা-এক : “আমাকে যখন ক্যাবিনেটে বসা আটকে দেওয়া হলো, (গত ডিসেম্বরে ড. রশিদের দুদক চেয়ারম্যান এবং আমার ক্যাবিনেট সচিব হওয়া নির্ধারিত ছিল, প্রধান উপদেষ্টা আমার একটি নথিও স্বাক্ষর করেছেন), তখন একটা গ্রুপ আমাকে ফোন করেছিল, ‘স্যার, আপনাকে ক্যাবিনেটে বসিয়ে দিই, আমরা শতকোটি টাকা খরচা করব, আপনি শুধু হ্যাঁ বলুন।
ঘটনা-তিন : “মে মাসের ৩০ তারিখে আমার এক নির্ভরযোগ্য লোক একটা দলিল পাঠায়, সেটা বর্তমান বাণিজ্যসচিব মাহবুবের ৩৫ কোটি টাকার চুক্তির দলিল। এত দিন এটা থামিয়ে রেখেছিলাম, দেখি ভেরিফিকেশন হোক। ভেরিফাই হয়ে এখন নিউজে পরিণত হয়েছে, তারপর আরো কিছু আসছে এগুলো নিউজ পেপারে।”
ঘটনা-চার : “১৩ ব্যাচের একজন অফিসার মাত্র তিন মাস সচিবগিরি করে উইড্র হয়ে ওএসডি অবস্থায় আছেন। বছরখানেক চাকরিও আছে। ওকে নিয়ে দুটি আলাদা সোর্স জানতে চায়, এই অফিসারটা কেমন। একটা প্রস্তাবে ৩০ কোটি, আরেকটা প্রস্তাবে ৩৬ কোটি, সচিব করার অফার আছে।”
ঘটনা-পাঁচ : এর মাঝখানে, এক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফোন করলেন আমাকে সকাল সাড়ে ন’টার দিকে। তিনি আমাকে জানতে চাইলেন তার সচিব সম্পর্কে। কাস্টমস ক্যাডারের অফিসার, নতুন প্রমোশন পেয়ে সচিব হয়েছেন বিস্ময়কর ভাবে। তিনি জানতে পেরেছেন, এই সচিব ৩৫ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে এখানে এসেছেন। একজন চরম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঢাকায় পাঁচটা বাড়ি আছে, ওনার অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেনশিপ আছে, পরিবার থাকে সেখানে। উনি আসলে যাবেন এনবিআরে এবং সেখানকার জন্য কয়েক’শো কোটি টাকার ডিল রেডি আছে।
ঘটনা-ছয় : একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরের ডিজি হিসেবে নিযুক্ত আছেন এরকম পনেরো ব্যাচের এক অফিসারের জন্য ৩০ কোটি টাকার অফার আছে। দুর্যোগ সচিব করা হবে। ওই অধিদপ্তরের এডভাইজার মহোদয়কে আমি আজকে জানিয়েছি যে, আপনার ডিজি সচিব হয়ে চলে যাচ্ছে।
ঘটনা-সাত : স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার চুক্তিতে এবং আড়াই কোটি টাকা ক্যাশ দিয়ে। তারপরও চার মাসের বেশি থাকতে পারেনি, এটা এখন সচিবালয়ের সবাই জানে।
ঘটনা-আট : গেল বছর শেষের দিকে শিপিং মিনিস্ট্রির সচিব বানাতে একজন অফিসারকে অফার দিয়েছিল একজন রিটায়ার্ড লেফটেনেন্ট জেনারেল এবং আলাদাভাবে এডিশনাল সেক্রেটারি এপিডি। ১২ কোটি টাকার ডিল। যারা টাকা খরচা করবে, তারা পরে তুলে নিবে। কেবল সহযোগিতা করলেই চলবে। অফিসারটি রাজী হননি। পরে অবশ্য তিনি টাকা ছাড়াই সচিব হয়েছেন, এখনও আছেন দুর্বল জায়গায়। সংশ্লিষ্ট অফিসার নিজেই আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আর কয়টা বলব? কাজেই এই সরকারের সময়ে টাকা দিয়ে, অর্থাৎ কোটি কোটি টাকা দিয়ে সচিব হয়, এটা কোনো মিথ্যা কথা নয়। সত্য কথা। সম্পূর্ণ সত্য কথা। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। সাবেক সচিব জনাব সামসুল আলমের ওয়াল থেকে নেওয়া !


